নামঃ মোহাম্মদ আবদুল মতীন।
পিতার নামঃ হোসাইন।
মায়ের নামঃ
সন্তানঃ ২ ছেলে তিন মেয়ে।
খলিফাঃ হযরত মাওলানা শাহ হাকিম মুহাম্মাদ আখতার (রহঃ)
এদেশের হক্কানী সিলসিলার যে সকল পীর-মাশায়েখ উম্মতের এসলাহে বাতেনির লক্ষ্যে নিরসল সাধনা করছেন তাদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন মাওলানা আবদুল মতীন বিন হুসাইন ছাহেব দামাত বারাকাতুহুম। তাসাউফ ও তরীকতের পুণ্যময় জগতের রাহবার আরেফবিল্লাহ্ হযরত মাওলানা শাহ মুহাম্মদ আখতার ছাহেব রহ্.
এর বিশিষ্ট খলিফা। খানকাহে চিশতিয়া এমদাদিয়া আশরাফিয়া ঢালকাগনরের পরিচালক। স্বীয় মুর্শিদ নিজ শায়েখের নামে প্রতিষ্ঠিত নির্মানাধীন ’জামিয়া হাকীমুল উম্মত ও গুলশানে আখতার কমপ্লেক্স’-এর স্বপ্নদষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা। তাজকিয়া ও তাসাউফের মেহনতের পাশাপাশি তিনি এলমে হাদীসের খেদমতের সাথেও নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। বোখারী শরীফের দরস দিচ্ছেন জামিয়া রাব্বানিয়ায়।ঢালকানগর বাইতুন নূরসহ আরও কয়েকটি মাদরাসার সাথে যুক্ত আছেন। তিনি হযরত শাইখুল হাদীস হযরত মাওলানা আজীজুল হক ছাহেব রহ্. এর ভক্ত, অনুরক্ত ও খাস শাগরেদ।কামনা ও চাহিদাই পয়দা হয় না। এটি এমন একটি স্তর যাকে স্বল্প বুদ্ধির ধর্মপ্রাণ লোকেরাই কেবল মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য মনে করে এবং তা অর্জনে ব্যর্থ হয়ে হতাশ হয়ে পড়ে। অর্থাৎ নিজের মধ্যে যখন কামনা ও বাসনার উপস্থিতি অনুভব করে তখন মনে করে যে, আমার সমস্ত মেহনত ও মোজাহাদা বুঝি বৃথা গেল। আল্লাহ পাকের যিকির-আযকার যা কিছু করেছি তার সবই ভেস্তে গেল, এমনকি অস্থিরতা ও পেরেশানীর কারণে তাদের যবান দিয়ে এমন কথাও বেরিয়ে যায় যা আল্লাহ পাকের শানে গোস্তাখী ও বেয়াদবী। যেমন, এতদিন যাবত মাওলাকে তালাশ করছি তবুও তিনি আমাদের প্রতি সামান্য সদয় দৃষ্টিপাত করছেন না! যেই বঞ্চিত সেই বঞ্চিতই রয়ে গেলাম! মনে রাখবেন, এটা শয়তানের মহাপ্রতারণা। শাহওয়াত ও কামভাব চিরতরে নির্মূল হয়ে যাওয়া এই স্তর কখনই কাম্য ও প্রার্থনীয় নয়। আর কামনা ও কামভাব যদি না-ই থাকে তখন গোনাহ থেকে বেঁচে থাকায় কোন কীর্তি ও কৃতিত্ব থাকে না। অন্ধ যদি এই বলে আত্মপ্রশংসা করে যে, আমি কখনো কুদৃষ্টি করি না তাহলে তা কখনই প্রশংসা ও সাধুবাদযোগ্য বলে বিবেচিত হবে না। সে কুদৃষ্টি করবে কিভাবে, কারণ দেখার উপকরণ ও মাধ্যমই তো তার নেই। নপংশুক বা পুরুষত্বহীন ব্যক্তি যদি দাবী করে যে, আমি পরনারীর সঙ্গে মেলামেশা করি না, তাহলে তা-ও কোন কীর্তি ও প্রশংসনীয় বিষয় বলে গণ্য হবে না; বরং কীর্তি ও কৃতিত্ব তো তখনই গণ্য হবে যখন সামর্থ্য থাকা সত্তে¡ও আপন অন্তরকে তার অবৈধ কামনা ও চাহিদা থেকে ফিরিয়ে রাখবে। যার দু’ প্রকারের এলাজ ও প্রতিবিধানই আমি বাতলে দিয়েছি। প্রথমটি তাৎক্ষণিক প্রতিবিধানে কার্যকর ভূমিকা রাখে এবং তার কোন প্রভাব প্রতিক্রিয়াই আর বাকি থাকতে দেয় না। দ্বিতীয়টি স্থায়ীভাবে কামনা ও বাসনাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
সারকথা হল- আমার উদ্দেশ্য হল এই ভয়াবহ গোনাহের ব্যাপারে সকলকে সতর্ক করা। এই ভয়াবহ গোনাহ মানুষের মধ্যে মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। যাদেরকে সমাজে নেককার, দ্বীনদার, পরহেযগার ও দরবেশ মনে করা হয় তারাও এই মারাত্মক গোনাহে ফেঁসে আছে। আল্লাহর ওয়াস্তে এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। বড় আফসোসের কথা হল- মুখে আল্লাহ পাকের ইশক ও মহব্বতের দাবী অথচ নজর ও দৃষ্টি অন্যের প্রতি। এ প্রসঙ্গে একটি গল্প মনে পড়ল- এক তরুণী পথ দিয়ে কোথাও যাচ্ছিল, রসপিপাসু এক যুবক তার পিছু নিল। তরুণী বিষয়টি টের পেয়ে তাকে লক্ষ করে প্রশ্ন করল, তুমি কে? আমার পিছু নিয়েছ কেন? যুবকটি উত্তর দিল, আমি তোমার প্রেমিক ও দেওয়ানা হয়ে গেছি, এজন্য তোমার পিছু নিয়েছি। তরুণীটি তাকে পরীক্ষা করার জন্য বলল- আমার পেছনে আমার বোন আসছে, সে আমার চেয়েও বেশি সুন্দরী ও আকর্ষণীয়। একথা শুনে যুবকটি পেছনে ফিরে বিপরীত দিকে হাঁটা শুরু করল। তার ইশক ও প্রেমের এই অবস্থা দেখে তরুণীটি তাকে এক দাবড়ানী দিয়ে বলল- আহা এই নিয়ে ইশক ও প্রেমের দাবী কর!
সুধীমণ্ডলী! কিয়ামত দিবসে আল্লাহ পাক যদি তার সম্মুখে দাঁড় করিয়ে কেবল এটুকু জিজ্ঞেস করে যে, আমাকে ছেড়ে তুমি অন্যের প্রতি তাকালে কেন? বলুন, তখন কী উত্তর দিবেন। এটা কোন হেলা-ফেলার বিষয় নয়, এর জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত। এর আরেকটি মোক্ষম তদবীর ও ব্যবস্থা রয়েছে যা দ্বারা পূর্বের তদবীর ও ব্যবস্থাগুলো আরও জোরালো ও শক্তিশালী হবে, আর তা হল- মনে যখন এ ধরনের খেয়াল ও কল্পনা আসে তখন অযু করে দু’ রাকাত নামায পড়–ন এবং তওবা করুন, আল্লাহ পাকের কাছে রোনাজারী করুন। তো যখনই মনে গোনাহের কামনা-বাসনা জাগে তখনই এই আমল করুন। এক দিন হয়ত অনেক রাকাত নামায পড়তে হবে। কিন্তু দ্বিতীয় দিন খুব কমই এ ধরনের খেয়াল ও কল্পনা মনে আসবে। এভাবে ধীরে ধীরে এ ধরনের সব খেয়াল অন্তর থেকে বেরিয়ে যাবে। কারণ, নামায নফসের জন্য বড় কঠিন কাজ। সে যখন দেখবে যে, সামান্য মজা লাভের বিনিময়ে এমন মহামুসিবত এসে পড়ে যে, তাকে সারা দিন নামাযেই পড়ে থাকতে হয়, তখন দেখবেন এ ধরনের ওয়াসওয়াসা ও খারাপ খেয়াল মনে আসাই বন্ধ হয়ে যাবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে এ ধরনের গোনাহের মুসিবত থেকে হেফাজত করুন। আমীন
অনুবাদ, আতাউল্লাহ আব্দুল জলীল
